পর্তুগালের স্থায়ী নাগরিক হতে চাচ্ছেন? পর্তুগালে স্থায়ীভাবে থাকতে হলে নাগরিকত্ব পেতে হবে। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে কীভাবে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাবেন এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অভিবাসনের জন্য সেরা দেশ বলা হয়ে থাকে পর্তুগালকে। তাই, প্রবাস হিসেবে যারা পর্তুগালকে বেছে নেন, তাদের মাঝে অনেকেই পর্তুগালে থাকার জন্য পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ, একবার নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে স্থায়িভাবে কাজ করে টাকা ইনকাম করার সুযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ সকল খাতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও, পর্তুগালের নাগরিক হতে পারলে আরও অনেক সুযোগ পাওয়া যায়।
তো চলুন, পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ২০২৫ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পেতে হলে আপনাকে উক্ত দেশে জন্মগ্রহণ/পিতা-মাতা বা যেকোনো একজন পর্তুগিজ/সে দেশে ১০ বছরের বেশি সময় যাবত থাকতে হবে। এছাড়াও, আরও কয়েকটি উপায়ে আপনি পর্তুগালে নাগরিকত্ব পেতে পারেন। পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়গুলো নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করে দিয়েছি, চলুন জেনে নেয়া যাক।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ১ – আপনি যদি পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন কিংবা আপনার পিতা-মাতা যদি পর্তুগিজ হয় অথবা পিতা-মাতার যেকোনো একজন পর্তুগিজ হয় তাহলে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাবেন। যদি পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবেনা। আপনাতেই পেয়ে যাবেন।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ২ – আপনার পিতা-মাতা অন্য দেশের নাগরিক কিন্তু আপনার জন্ম হয়েছে পর্তুগালে। যেকোনো ভাবে হোক না কেন, আপনার জন্ম যদি পর্তুগালে হয়ে থাকে এক্ষেত্রে ২ বছর পর্তুগালে থাকার পর পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, এজন্য আপনাকে অবশ্যই পর্তুগালের প্রাইমারি স্কুল থেকে পড়ালেখা শেষ করতে হবে।
এছাড়াও,পিতার রেসিডেন্স পারমিট এর বয়স যদি ২ বছর বা এর বেশি হওয়ার পর সন্তানের জন্ম হয়ে থাকে, তবে উক্ত সন্তানের জন্য পর্তুগাল নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ৩ – বৈধভাবে পর্তুগালে ৬ বছরের কম সময় এবং ৫ বছরের বেশি সময় যাবত থাকার পর, আপনি চাইলে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে পর্তুগিজ ভাষা কমপক্ষে A2 পর্যন্ত শেষ করতে হবে। এছাড়াও, আপনার নামে কোনো মামলা থাকা যাবে না এবং থাকলেও তার সাজা ২ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। এসব শর্ত অনুযায়ী আপনি ৫ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ৪ – পর্তুগিজ নাগরিককে বিয়ে করলে কিংবা তার সাথে লিভ টুগেদার এ ৩ বছর বা এর বেশি সময় যাবত থাকলে আপনি চাইলে পর্তুগিজ নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি বিয়ে থাকে, তবে বিয়ের অফিসিয়াল ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। লিভ টুগেদার এর ক্ষেত্রে মিউনিসিপালিটিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ৫ – পর্তুগালের কোনো নাগরিক যদি আপনাকে দত্তক নেয়, তাহলে সে দেশে ৩ বছর থাকার পর আপনি পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঠিক একইভাবে পর্তুগিজ যে কেউ যদি কাউকে দত্তক নেয়, তবে ৩ বছর পর তার জন্য নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে।
পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার উপায় ৬ – পর্তুগালে জন্মগ্রহণ হওয়ার পর যদি কেউ ১০ বছর পর্তুগালে অবৈধভাবে থাকে, তবে সে ব্যক্তি চাইলে নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে।
পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার উপায় ৭ – ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর যেকোনো একটি দেশের কোনো নাগরিককে বিয়ে করার পর যদি পর্তুগালে ৫ বছর থাকতে পারেন, তবে আপনি চাইলে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর সকল তথ্য সঠিক হলে আপনি পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন এবং একজন পর্তুগিজ হয়ে যাবেন। পর্তুগিজ নাগরিক হওয়া সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। চলুন, সেসব তথ্য জেনে নেয়া যাক।
পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেতে কি কি লাগবে
পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু শর্ত মানতে হবে। পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যা যা লাগবে তার একটি তালিকা নিম্নরূপ –
- অবশ্যই বৈধভাবে পর্তুগালে ৫ বছরের বেশি সময় এবং ৬ বছরের কম সময় যাবত থাকতে হবে।
- নিজ দেশে কিংবা পর্তুগালে কোনো মামলায় ২ বছরের বেশি সাজা হওয়া যাবে না। আপনার নামে যে কোনো বড় ধরনের ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই এটি প্রমাণ করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
- আপনার অরিজিনাল জন্ম সনদ (বাংলাদেশি)
- অরিজিনাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (বাংলাদেশি)
- পর্তুগিজ ভাষার সার্টিফিকেট যা মিনিমাম A2 লেভেলের হতে হবে।
- পর্তুগাল থেকে নেয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
উপরোক্ত তথ্যগুলো এবং ডকুমেন্টগুলো হলে আপনি পর্তুগাল নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, আপনার বাংলাদেশি জন্ম সনদ অরিজিনাল এবং অরিজিনাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা নোটারি পাবলিক, আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। অতঃপর, আবারও একই ডকুমেন্ট বাংলাদেশ হাইকমিশন ইন নিউ দিল্লি থেকেও সত্যায়িত করে নিতে হবে। এরপর, পর্তুগিজ কনস্যুলেট, অ্যাম্বাসি ইন নিউ দিল্লি থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে।
অতঃপর, এসব ডকুমেন্ট পর্তুগালে পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করে সেখানে থেকে নোটারি করে নিতে হবে। এরপর, আপনি পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং সকল তথ্য সঠিক হলে পর্তুগালের নাগরিক হতে পারবেন।
পর্তুগালে বৈধ হওয়ার উপায়
পর্তুগালে বৈধ হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্তুগালের ভিসা করা। পর্তুগালে থাকতে চাইলে এবং পর্তুগালে থেকে কাজ করতে চাইলে পর্তুগালের ভিসা করতে হবে। তবে, আপনি যদি স্থায়ীভাবে পর্তুগালে বসবাস করতে চান, তবে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেতে হবে। এজন্য, পোস্টে উল্লেখ করে দেয়া পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ২০২৫ অনুসরণ করতে পারেন। এরপর, উক্ত নিয়মগুলো অনুযায়ী নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করলে নাগরিকত্ব নিতে পারবেন।
পর্তুগালে অবৈধভাবে বসবাস করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় আপনার জেল সহ জরিমানা হতে পারে। তাই, পর্তুগালে থাকতে চাইলে বৈধ ভিসা থাকতে হবে। আপনার যদি ভিসা থাকে, তবে উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুযায়ী আপনি চাইলে পর্তুগিজ নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর প্রায় ১ বছরের মতো সময় লাগতে পারে আপনার নাগরিকত্ব অনুমোদিত হওয়ার জন্য।
পর্তুগালে নাগরিকত্ব পেতে কত সময় লাগে
পর্তুগালে গেলেই, হোক সেটি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কিংবা স্টুডেন্ট ভিসায়, উক্ত ব্যক্তি পর্তুগালের একটি অস্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পর্তুগালে ৫ বছরের বেশি সময় এবং ৬ বছরের কম সময় যাবত থাকতে হয়। এছাড়া, পর্তুগিজ ভাষায় দক্ষতা থাকলে এবং কোনো মামলা না থাকলে পর্তুগালে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। আবেদন করার ৬ মাস থেকে ১ বছরের মাঝে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করার সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাবমিট করতে হবে। বাংলাদেশি হলে বাংলাদেশের এবং পর্তুগালের এবং অন্য দেশের হলে সে দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং পর্তুগালের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। এছাড়াও, উপরে উল্লেখ করে দেয়া ডকুমেন্টগুলো লাগবে। এছাড়াও, এসব ডকুমেন্ট অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সরকারিভাবে দক্ষিন কোরিয়া যাওয়ার উপায়
আরও পড়ুনঃ সরকারি ভাবে জাপান যাওয়ার উপায়
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে বিমানের টিকেট চেক করার নিয়ম
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় ২০২৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে কীভাবে পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় এবং কি কি শর্ত রয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।