লিবিয়া যেতে কত টাকা লাগে এবং লিবিয়া যাওয়ার উপায় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। লিবিয়া যেতে চাইলে লিবিয়া ভিসা করার নিয়ম এবং লিবিয়া যেতে কি কি লাগে জানা জরুরি।
লিবিয়া উত্তর আফ্রিকায় অবস্থিত একটি দেশ। এটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এবং এর পূর্বে মিশর, দক্ষিণ-পূর্বে সুদান, দক্ষিণে চাদ এবং নাইজার, এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া রয়েছে। লিবিয়ার আয়তন ১,৭৫৯,৫৪০ বর্গ কিলোমিটার (৬৭৯,৩৫৮ বর্গ মাইল), যা এটিকে বিশ্বের ১৭ তম বৃহত্তম দেশ করে তোলে। লিবিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সাত মিলিয়ন, যার বেশিরভাগই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে বাস করে।
আমাদের দেশের অনেকেই লিবিয়া গিয়ে টাকা উপার্জন করতে আগ্রহী। কিন্তু, লিবিয়া যেতে কি কি লাগে, লিবিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং লিবিয়া যেতে কত টাকা লাগে এবং লিবিয়া যাওয়ার উপায় এসব জানেন না। তো চলুন, লিবিয়া ভিসা করতে কি কি লাগে এবং লিবিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।
সরকারিভাবে লিবিয়া যেতে ১ লক্ষ টাকা থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। তবে, কোনো ভিসা এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে লিবিয়া ভিসা করলে ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। কিন্তু, আপনি যদি কোনো দালালের সহযোগিতা নিয়ে লিবিয়া ভিসা করেন, তাহলে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাগতে পারে।
লিবিয়া ভিসা করতে কত টাকা লাগবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কোন ভিসার জন্য আবেদন করছেন এবং কোন মাধ্যমে আবেদন করছেন। লিবিয়ার কয়েক ধরনের ভিসা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে – লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, লিবিয়া ভিজিট ভিসা এবং লিবিয়া স্টুডেন্ট ভিসা।
এই তিনটি ভিসায় লিবিয়া যেতে পারবেন। লিবিয়া যেতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা লাগে। স্টুডেন্ট ভিসায় লিবিয়া যেতে ৭০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা লেগে থাকে। তবে, ভিজিট ভিসায় লিবিয়া যেতে ১ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা লেগে থাকে।
ভিসা এজেন্সির কিংবা দালালের সহযোগিতা নিলে লিবিয়া যেতে ভিসা খরচ বেশি হবে। নিজে থেকে আবেদন করলে এবং সরকারি ভাবে লিবিয়া যেতে খুবই কম খরচ লাগে।
লিবিয়া যেতে চাইলে কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। লিবিয়া যেতে কি কি কাগজ লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। লিবিয়া কাজের ভিসায় যেতে চাইলে লিবিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগবে দেখে নিতে পারেন।
উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো হলে লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করে সহজেই লিবিয়া যেতে পারবেন। লিবিয়া যেতে হলে এসব ডকুমেন্ট লাগবেই। তবে, লিবিয়া ভিসা আবেদন করার পূর্বে লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া লিবিয়া ভিসা আবেদন করতে পারবেন না।
লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট না হলে আপনি কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলে উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো দিয়ে যে কোম্পানিতে কাজ করতে চাচ্ছেন বা যে নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে চাচ্ছেন, তার থেকে একটি ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন কিংবা কোনো ভিসা এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট নিতে পারেন। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন অনলাইনে কিংবা লিবিয়া ভিসা কনস্যুলেট এর মাধ্যমে।
লিবিয়া গিয়ে এমন কিছু কাজ করতে পারবেন যার চাহিদা অনেক বেশি। লিবিয়ায় যেসব কাজের চাহিদা বেশি, সেসব কাজ করলে অল্প সময়ের মাঝে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। লিবিয়ায় যেসব কাজের চাহিদা সবথেকে বেশি এগুলো হচ্ছে –
উপরোক্ত কাজগুলোর লিবিয়ায় অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে। এই কাজগুলোর ভিসা করে লিবিয়া যেতে পারলে ভালো পরিমাণ বেতনে কাজ করতে পারবেন। লিবিয়ার টাকার মান বেশি হওয়ার কারণে অল্প ইনকামে বেশি টাকা পাবেন।
সহজে লিবিয়া যাওয়ার উপায় হচ্ছে লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন করা এবং ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে লিবিয়া ভিসার জন্য আবেদন করা। লিবিয়া গিয়ে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
লিবিয়া যাওয়ার উপায় নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করে দিয়েছি। নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে লিবিয়া কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
লিবিয়া যেতে হলে প্রথমেই ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে। লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট পেতে পাসপোর্ট, কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র, মেডিকেল রিপোর্ট ইত্যাদি দিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।
যে কোম্পানিতে কাজ করতে ইচ্ছুক, সেখানে অনলাইনে বা ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপর, ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে গেলে ভিসা আবেদন করতে পারবেন ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে।
লিবিয়া ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। লিবিয়া কাজের ভিসার আবেদন করতে বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত লিবিয়া ভিসা এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর, তাদের থেকে আপনি যে কাজের ভিসায় লিবিয়া যেতে চাচ্ছেন, সেই কাজের ভিসা ফরম নিতে হবে।
অতঃপর, সকল তথ্য দিয়ে ভিসা আবেদন পূরণ করতে হবে। ভিসা আবেদন পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
লিবিয়া ভিসা ফরম পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সহ লিবিয়া ভিসা ফরমটি জমা দিতে হবে লিবিয়া ভিসা এম্বাসিতে। এরপর, আপনার স্বাক্ষর, বায়োমেট্রিক তথ্য এবং আইরিশ প্রদান করতে হবে।
ভিসা ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সকল খরচ দিয়ে সহজেই ভিসা করতে পারবেন। ভিসা আবেদন করার পর অপেক্ষা করতে হবে ভিসা প্রসেসিং হওয়ার জন্য। ভিসা প্রসেসিং হলে ফ্লাইট টিকেট কেটে লিবিয়া যেতে পারবেন।
লিবিয়া যেতে হলে উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন। লিবিয়া কাজের ভিসা পেতে লিবিয়া ভিসা এম্বাসিতে যোগাযোগ করুন। আশা করছি, লিবিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লিবিয়া যাওয়ার উপায় তো জানা হলো, চলুন লিবিয়া যেতে কত বয়স লাগে এবং লিবিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি জেনে নেয়া যাক।
আরও পড়ুন: লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায় ও খরচ
আরও পড়ুন: অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার নিয়ম
লিবিয়া যেতে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হতে হবে। ১৮ বছর বয়সের কম হলে লিবিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। লিবিয়া ভিসার জন্য পাসপোর্ট করতেও ১৮ বছর বয়স হতে হবে। এছাড়া, ১৮ বছর বয়সের নিচে তো এখন জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়ইনা। ১৮ বছর বয়স হলে লিবিয়া কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
লিবিয়াতে বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন। কাজের উপর ভিত্তি করে বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। লিবিয়া গিয়ে যেকোনো কাজ করে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন। লিবিয়া কাজের উপর দক্ষতা থাকলে আরও বেশি বেতন পাওয়া যায়। যে কাজের ভিসা করবেন, সেই কাজে দক্ষতা থাকলে আরও বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন।
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে লিবিয়া যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। লিবিয়া যেতে কত টাকা লাগে এবং লিবিয়া যেতে কি কি লাগে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। যারা বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় লিবিয়া যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভিসা সম্পর্কিত আরও এমন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।
Leave a Reply