বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়

বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়

বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়

স্বপ্নের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান? কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় জানেন না? দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে এবং দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি লাগে এসব জানেন না?

দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম এবং দক্ষিণ কোরিয়া যেতে যা যা করতে হবে সবকিছু নিয়ে আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, কীভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করা যায় এবং দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।


দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়

দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প খাতে কর্মসংস্থান পারমিট সিস্টেম (ইপিএস)-এর মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী সরকারিভাবে দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এই কর্মীদের নির্বাচন ও প্রেরণের দায়িত্ব পালন করে।

বোয়েসেলের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বের বছরে ৫ হাজার+ বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। ২০২৪ সালে ৩ থেকে ৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তাদের ন্যূনতম মাসিক আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সময় কাজ করলে তাদের আয় তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বেতনের সাথে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও কোম্পানি প্রদান করে। অনেক কর্মী প্রতি মাসে তাদের পরিবারের জন্য ১ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন।

দক্ষিণ কোরিয়া গেলে প্রতি মাসে উপরোক্ত বেতনের মতোই আয় করতে পারবেন প্রতি মাসে। তো চলুন, দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে এসব বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি লাগে

দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চাইলে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য এবং ভিসা আবেদন করতে কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি লাগে তার একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। দেখে নিতে পারেন।

  • ৬ মাস বা এর বেশি মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট
  • দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • কোরিয়ান ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
  • কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ হওয়া যাবেনা
  • বোয়েসেল ফি
  • বোয়েসেলে জামানত
  • এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট

উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো এবং ভিসা প্রসেসিং ফি, বোয়েসেলে জমা দেয়া জামানত এসবকিছু থাকলে আপনিও যেতে পারবেন দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রতি বছর কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে প্রতি মাসে ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে ওভারটাইম সহ ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন। অনেকেই ওভারটাইম করে প্রতি মাসে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছে।

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা তো জানা হলো, চলুন, দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে জেনে নেয়া যাক।

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম খরচ হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত একজন শ্রমিকের থেকে জানা গেছে যে, বোয়েসেল সার্ভিস চার্জ সহ প্রায় ৩৪ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এছাড়া, বোয়েসেলের কাছে ১ লক্ষ টাকা জামানত রাখতে হয় এবং বিমান ভাড়া প্রায় ৫০ হাজার টাকায় মতো যায়। সবমিলিয়ে মোট ২ লক্ষ টাকার মাঝেই দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসায় আসা যায়।

কাজের ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য বোয়েসেলের কাছে জামানত রাখা ১ লক্ষ টাকার পরিমাণ এখন বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। তবে, কন্ট্রাক্ট শেষে দেশে ফিরে বোয়েসেলের কাছে আবেদন করে জামানতের পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যায়। তাই, জামানতের টাকার হিসেব বাদ দিয়ে মাত্র ১ লক্ষ টাকার মাঝেই দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায় বলা চলে।

তবে, অন্যান্য খরচ যেমন পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকা লাগতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে। এছাড়া, মোট হিসেব করলে জামানত সহ মাত্র ৪.৫ লক্ষ টাকায় দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়া সম্ভব।


ছয়টি ধাপে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে ছয়টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এই ছয়টি ধাপ অতিক্রম করে কীভাবে সহজেই দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায়, সেসব জানতে পারবেন নিচে উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে। তো, দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়গুলো জেনে নেয়া যাক।

ধাপ ১ – অনলাইনে আবেদন

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চাইলে প্রথমেই বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার পর লটারি করা হয়। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে লটারির জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর লটারি করা হয়। লটারি শেষে যাদের নাম আসে, তারা দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।

ধাপ ২ – কোরিয়ান ভাষা 

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে। লটারিতে নাম আসার পর প্রার্থীরা ২ মাসের সময় পান কোরিয়ান ভাষা শেখার জন্য। ২ মাস পর তাদের কোরিয়ান ভাষার পরীক্ষা নেয়া হয়। এইচআরডি কোরিয়া থেকে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়। এর মাঝে রিডিং ১০০ নাম্বার এবং লিসেনিং ১০০ নাম্বার। পরীক্ষার সময় ৫০ মিনিট।

পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ হলে স্কিল টেস্ট নেয়া হয়। 

ধাপ ৩ – স্কিল টেস্ট

দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে কাজ করার সক্ষমতা যাচাই করার জন্য স্কিল টেস্ট নেয়া হয়ে থাকে। এইচআরডি কোরিয়ার প্রতিনিধিরা এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। পরীক্ষায় কিছু রিং দেয়া হয়, সেগুলো দ্রুত মেশিনে লাগাতে হয়। এভাবে করে আরও কিছু ধাপ অতিক্রম করে স্কিল টেস্ট এক্সাম দিতে হয়। এছাড়াও, আবেদনকারী প্রার্থীরা কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ কিনা সেটি যাচাই করা হয়। 

ধাপ ৪ – মেডিকেল টেস্ট

ভাষা পরীক্ষা এবং স্কিল টেস্ট এ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথমত, তাদের নিজ নিজ জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষায় রক্ত পরীক্ষা, যক্ষ্মা ও হেপাটাইটিস ‘বি’ পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থীদের নিজ নিজ থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করতে হয়।

ধাপ ৫ – বোয়েসেল ফি এবং জামানত

উপরোক্ত ধাপগুলো সম্পন্ন করার পর বোয়েসেল ফি এবং বোয়েসেলে জামানত প্রদান করতে হয়। পূর্বে ১ লক্ষ টাকা জামানত নিলেও এখন ৩ লক্ষ টাকা জামানত নেয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া, বোয়েসেলের ফি প্রায় ৩৪ হাজার টাকার মতো লাগে। এই ফি এবং জামানত প্রদান করতে হয়। জামানতের টাকা কন্ট্রাক্ট শেষে দেশে ফিরে আবেদন করলে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

তবে, কন্ট্রাক্ট শেষে অন্য কোম্পানির সাথে আবারও কন্ট্রাক্ট করলে এই জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হয়না বলে জানা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসীরা এই নিয়মের পরিবর্তন চাচ্ছেন। 

ধাপ ৬ – ফ্লাইট টিকেট ক্রয়

সকল কাজ শেষে ফ্লাইট টিকেট কাটতে হয়। এজন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা লেগে থাকে। ফ্লাইট টিকেট কেটে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায়। এরপর, প্রটি মাসে ১.৫ লক্ষ টাকা সহ ওভারটাইম করলে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায়। প্রতি মাসে নিজের ব্যক্তিগত খরচ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রায় সব টাকাই জমানো যায়। 

এছাড়া, থাকা এবং খাওয়ার খরচ তো কোম্পানি বহন করেই। তাই, দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চাইলে লটারি নিবন্ধন শুরু হতেই আবেদন করুন এবং এই পোস্টে উল্লিখিত উপরোক্ত সকল ধাপ অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করুন। 


আরও পড়ুনঃ লিবিয়া যেতে কত টাকা লাগে এবং লিবিয়া যাওয়ার উপায়

আরও পড়ুনঃ লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায় ও খরচ

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার নিয়ম


শেষ কথা

এতক্ষণ যাবত দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টে উল্লেখ করে দেয়া দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় এবং ধাপগুলো অনুসরণ করলে সহজেই কোরিয়া যেতে পারবেন। 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের এই পোস্টে আমরা বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সহজ উপায়, খরচ ও আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। পরবর্তী পোস্টে আমরা এশিয়া অথবা ইউরোপের অন্য কোনো দেশের ভিসার আপডেট সম্পর্কে জানবো। নিয়মিত ইউরোপের উচ্চশিক্ষা, মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা আপডেট ও শিক্ষার আপডেট জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট। এবং ফেসবুকে নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিশিয়াল পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2024 All rights reserved ScholarBest